দুর্বলদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টা

দুর্বলদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টা

দুর্বলদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টা
দুর্বলদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টা

মিজানুর রহমান (টনি): মুসলমানের জন্য সর্বোচ্চ অনুসৃত ব্যক্তি হলেন মহানবী (সা.)। তাঁর জীবন আদর্শই মুসলমানের জন্য চির অনুসরণীয়। আর মহানবী (সা.)-এর অন্যতম প্রধান নীতি ছিল অসহায় মানুষকে সাহায্য করা। নবুয়ত লাভের আগেও তিনি মানুষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন।

এ জন্য প্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি ভয় পেলে খাদিজাতুল কুবরা (রা.) তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)
জীবনের প্রতি পর্যায়ে মহানবী (সা.) অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

যার কয়েকটি বিবরণ তুলে ধরা হলো-
১. হিলফুল ফুজুল : হিলফুল ফুজুল হলো মক্কায় সংঘটিত একটি সামাজিক অঙ্গীকার। এতে কুরাইশের সম্ভ্রান্ত ১০ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল জনকল্যাণ, ন্যায়প্রতিষ্ঠা ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করা।

মক্কায় আগমনকারী একজন বিদেশির অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এই অঙ্গীকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ জুদআনের ঘরে একটি অঙ্গীকারে উপস্থিত ছিলাম, যা আমার কাছে লাল উটের চেয়ে প্রিয়। যদি ইসলাম আগমনের পরও আমাকে এ কাজের জন্য আহ্বান করা হতো তবে আমি সাড়া দিতাম। (খাতামুন নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা ১৩৫)
২. ইরাশি ব্যক্তির উটের মূল্য উদ্ধার : আল্লামা ইবনে হিশাম লেখেন, একবার ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তি উট বিক্রির জন্য মক্কায় আসে। আবু জাহেল ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উট কেনে, কিন্তু মূল্য পরিশোধে টালবাহানা শুরু করে।

অসহায় ইরাশি ব্যক্তি মক্কায় জনসমাগমে উপস্থিত হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন লোকেরা তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। লোকটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি আবু জাহেলের বাড়িতে উপস্থিত হন এবং তার কাছ থেকে মূল্য আদায় করে লোকটিকে দেন।
(দালাইলুন নুবুওয়াহ, পৃষ্ঠা ১৬৬)
৩. দুর্বলের ওপর অত্যাচারীদের মুক্তি নেই : জাবির (রা.) বলেন, সমুদ্রের মুহাজিররা (হাবশায় হিজরতকারী প্রথম দল) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রত্যাবর্তন করলে তিনি বলেন, তোমরা হাবশায় যেসব আশ্চর্যজনক বিষয় দেখেছ তা কি আমাকে বলবে না? তাদের মধ্য থেকে এক যুবক বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! একবার আমরা বসা ছিলাম, আমাদের সামনে দিয়ে এক বৃদ্ধা মাথায় পানিভর্তি কলস নিয়ে যাচ্ছিল। তখন এক যুবক তার কাঁধে হাত রেখে ধাক্কা দিলে সে উপুড় হয়ে পড়ে যায় এবং তার কলসটি ভেঙে যায়। সে উঠে দাঁড়িয়ে যুবকের দিকে তাকিলে বলল, ‘হে দাগাবাজ! তুমি অচিরেই জানতে পারবে যখন আল্লাহ তাআলা ইনসাফের আসনে উপবিষ্ট হয়ে পূর্বাপর সব মানুষকে সমবেত করবেন এবং হাত-পাগুলো তাদের কৃতকর্মের বিবরণ দেবে তখন তুমিও জানতে পারবে সেদিন তোমার ও আমার অবস্থা কী হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এই বৃদ্ধা সত্য কথাই বলেছে। আল্লাহ সেই উম্মতকে কিভাবে গুনাহ থেকে মুক্ত করবেন, যাদের সবলদের থেকে দুর্বলদের প্রাপ্য আদায় করে দেওয়া হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১০)

৪. আল্লাহ আরো বেশি শক্তিধর : আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বলেন, একবার আমি আমার এক দাসকে প্রহার করছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবু মাসউদ! জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার ওপর এর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান। আমি পেছন থেকে এমন শব্দ দুইবার শুনতে পেলাম। আমি পেছন ফিরে দেখি, নবী (সা.)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম। তিনি (সা.) বললেন, তুমি যদি তাকে মুক্ত করে না দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করত। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৫৯)

আল্লাহ সবাইকে অসহায় মানুষের পাশে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply